ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে আ. লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন সিরাজুল মোস্তফা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::

দুই দফা সফল ভাবে সরকার পরিচালনার পর তৃতীয়বারেও নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামীলীগ। আর ওই লক্ষে প্রায় দুইশত আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জয়ী হয়ে আসতে সারাদেশেই জনপ্রিয়, সৎ, কর্মীবান্ধব, জনবান্ধব, পরিচ্ছন্ন, ত্যাগি ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনা। এর অংশ হিসেবে কক্সবাজারের মহেশখালী-কুতুবদিয়া সংসদীয় আসনে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফার নাম আসছে সবার আগে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রে তাকে প্রার্থী করার বিষয়ে কথা চলছে। সব ঠিকঠাক থাকলে শেষ পর্যন্ত এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাই কক্সবাজারের এ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন বলে মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সিরাজুল মোস্তফা নিজেও আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়ে যে কারো সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জয়ী হয়ে আসনটি দলীয় প্রধানকে উপহার দিতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘আমি পুরানো রাজনীতিবিদ। আমি আগেও নির্বাচন করেছি। আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। আমার মনোনয়ন চাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটা নিয়ে কেউ আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু না। এতদিন হালকাভাবে ছিলাম; বলিনি। কারণ আমি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। এখন সময় কাছে আসায় মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। এটাতে আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নেই।’

তিনি আরো বলেন, মনোনয়নের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হিসাব-নিকাশ আছে। বিভিন্ন রিপোটেশন আছে। তিনি বুঝে-চিন্তে যাকে মনোনয়ন দিবেন তাকে মেনে নেবেন সবাই। আমিও মেনে নেবো। আর আমি পেলে সবাইকে সাথে নিয়ে যেভাবে নৌকার বিজয় আনতে হয় সেভাবে আপ্রাণ কাজ করবো।

তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন অনেকে চাইতে পারে। তবে জেলা সভাপতি হিসেবে আমার নির্দেশনা হচ্ছে মনোনয়ন চাইতে গিয়ে কেউ কারো সাথে দলাদলি, দলে কোন্দল সৃষ্টি করবেন না; সম্পর্ক খারাপ করবেন না। সবাই একই মঞ্চে বসেও মনোনয়ন চাইতে পারেন। পরে যে মনোনয়ন পাবেন তার পক্ষে সবাই মিলেমিশে কাজ করবেন।’

দলীয় সূত্র জানায়, ক্লিন ইমেজের ও স্বজ্জন ব্যক্তি হিসাবে সুপরিচিত এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে এ আসনে নির্বাচন করে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্ধিতা গড়ে তুলেছিলেন। আর ওই আসনের বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক তরুণ রাজনীতিবিদ হলেও তাকে প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হয়নি। আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলো প্রার্থী দিলে তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে জয়ী হয়ে আসতে হলে সিরাজুল মোস্তফার মতো সর্বজন গ্রহনযোগ্য ক্লিন ইমেজের নেতাকে প্রার্থী করার বিষয়ে কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী। যার কারণে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চাপের মুখে গত ২৩ আগস্ট কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা মহেশখালীর নিজ বাড়ীতে স্থানীয় সাংবাদিকের কাছে নিজেকে আওয়ামীলীগের একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে ঘোষণা করেন। আর ওই ঘোষনার পর থেকেই মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় শুরু হয়েছে নয়া মেরুকরণ। তৃণমূলের নেতা-কর্মীসহ আওয়ামী ঘরনার ত্যাগী ও বঞ্চিত সকল স্তরের নেতা-কর্মী সিরাজুল মোস্তফাকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। আশার সঞ্চার হয়েছে সর্বস্তরের মানুষের মাঝেও।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, এডভোকেট সিরাজুল মোস্তাফা একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি ত্যাগী নেতাকর্মী ও বঞ্চিত মানুষের আস্থার ঠিকানা। আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে তিনিই দলকে এগিয়ে নিয়েছেন নিঃস্বার্থ ভাবে। এর প্রমান হলো- জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির পদ এই নির্ভরযোগ্য নেতাকেই দিয়েছেন দলীয় প্রধান। আর এ কারণেই মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফার বিকল্প নেই বলে তৃণমূলের অভিমত।

স্থানীয় লোকজন ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আরও জানান, বর্তমান দলীয় সাংসদ এর ভোটের অবস্থা এলাকায় তেমন ভাল নয়। ঘের দখল-বেদখল, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি, স্থানীয় রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন না করা, বিএনপি’র চক্কর থেকে বের হতে না পারা, ঘুরেফিরে বিএনপি ঘরানার লোকজন লাভবান হওয়া, জমি অধিগ্রহনের টাকা উত্তোলনে জনগনের চরম হয়রাণীর প্রতিকার না করা, ক্ষেত্রবিশেষে বিএনপি ঘরানার লোকজনের পক্ষে অবস্থান নেয়াসহ বিভিন্ন কারণে বর্তমান সাংসদ এর প্রতি সাধারণ মানুষ ও দলীয় অধিকাংশ লোকজনের মাঝে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে।

অপরদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ড. আনসারুল করিম নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে যাওয়ার কারণে তার প্রতিও নাভিশ^াস তৈরী হয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ না রাখা, দলীয় কোন কর্মসূচীতে কোন ধরণের অংশগ্রহন না করা, নেতা-কর্মীদের পাশে না থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। আর এসব কারণেই সর্বজন গ্রহনযোগ্য ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাই বিএনপিসহ অন্যান্য যে কোন দলের প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হয়ে আসতে পারবেন বলে মনে করছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

দলীয় সূত্র আরও জানায়, কক্সবাজারের মধ্যে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনটি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে দেশের অন্যতম আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকায় পরিনত হয়েছে। দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক বেশ কয়েকটি মেঘা প্রকল্পও এই মহেশখালীকে ঘিরেই। এ মুহুর্তে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি গ্যাস লাইন, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যেই এলএনজি গ্যাস লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন এর কাজও শুরু হওয়ার পথে। আরো দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজও শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যে। সব কিছু মিলিয়ে সরকারের অত্যন্ত আস্থাভাজন ও একান্ত ব্যক্তিকেই এই আসনে মনোনয়ন দিবে এমনটি নিশ্চিত। সেই হিসেবেও এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা এগিয়ে আছেন বলে মনে করে সচেতন মহল।

উপজেলা পর্যায়ের এক র্শীষ নেতা বলেন, জেলা সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বর্তমান আওয়ামীলীগের জন্য একটি আইডল। ক্লিন ইমেজের এ নেতাকে আমরা স্বাগত জানাই। তার ঘোষণা মহেশখালী উপজেলা আওয়ামীলীগ ও মহেশখালী-কুতুবদিয়া এক সুতায় আসার একটি শুভ লক্ষন। আমরা তার অপেক্ষায় থাকবো। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি, জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। আমরা মহেশখালীবাসী আওয়ামীলীগকে আর দু’ভাগ দেখতে চায়না, জননেত্রী শেখ হাসিনা যেন এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফার মতো ক্লিন ইমেজের নেতাকে যেন তিনি মনোনয়ন দেন।

ইউনিয়ন পর্যায়ের এক নেতা বলেন, মহেশখালীর আওয়ামীলীগকে এখন যেভাবে দু’ভাগ করে দেয়া হয়েছে, এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা তা থেকে পরিত্রাণ করলে দল শক্তিশালী হবে এবং কক্সবাজার-২ আসন আওয়ামীলীগের স্থায়ী আসনে পরিনত হবে। তার মনোনয়ন প্রত্যাশার ঘোষণাকে আমরা ইতিবাচক বলে মনে করি।

উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ছাত্রলীগে যোগদান করেন সিরাজুল মোস্তফা। ওই বছরই মহেশখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জি.এস নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে মহেশখালী থানা ছাত্রলীগের সর্বপ্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে পরিবার ও দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

পাঠকের মতামত: