ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভুয়া সাংবাদিকের উৎপাত, বিব্রত মূলধারার সাংবাদিকরা

সি এন ডেস্ক ::

মঙ্গলবার বিকেল ৪টা। পাঁচটি আবেদন ফরম নিয়ে আসেন রাশেদ। মোটরযান পরিদর্শকের রুমে ঢুকেই নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কর্মকর্তাকে কাজ করে দেয়ার হুমকি দেয়। তা নাহলে মিথ্যা সংবাদ বানিয়ে প্রকাশ করা হবে। রাশেদুল ইসলাম রাশেদ নিজেকে সিটিজি ক্রাইমটিভি নামক একটি অনলাইন টিভির চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান হিসেবে পরিচয় দেয়।

রাশেদ ওই কর্মকর্তাকে বলেন, আমার এ লাইসেন্সগুলো দেখে দিন। কর্মকর্তা বলেছেন আপনি জমা দিয়ে যান পরে দেখবো। কারণ আপনার আগে অনেকের কাগজপত্র জমা আছে। তখন রাশেদ হুমকি দিয়ে ওই কর্মকর্তাকে বলেন আপনাদেরকে নিয়ে ক্রাইম নিউজ বানিয়ে প্রকাশ করে দিবো তখন বুঝবেন।

শুধু রাশেদ নয়, বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে কয়েকমাস ধরে তথাকথিত সাংবাদিকের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এসব ব্যক্তি নিজেকে মূল ধারার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিআরটিএতে দালালি শুরু করে দেন।

চার-পাঁচজনের লাইসেন্স এবং রেজিস্ট্রেশনের কাগজ অফিসে নিয়ে গিয়ে নিজেকে সাংবাদিক দাবি করে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ব্ল্যাকমেইলিং করা শুরু করে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করারও হুমকি প্রদান করে এসব ভুয়া সাংবাদিকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর বিভিন্ন জায়গায় এসব কার্ডধারীরা বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যায়। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) সিটিজি ক্রাইমটিভির তিন ব্যক্তি পটিয়া থানার ওসির (তদন্ত) কাছে চাঁদা চাইতে গেলে তিনজনকে আটক করে হাজতে দিয়ে দেন। এর আগে গত ১৪ নভেম্বর যমুনা টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রতারণাও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তথাকথিত সিটিজি ক্রাইমটিভি নামক একটি অনলাইন টিভির চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান দাবি করে চার ব্যক্তির লাইসেন্স স্বাক্ষর করাতে নিয়ে যান বিআরটিএ’র মোটরযান পরিদর্শক মো. মুছার কক্ষে। এমতাবস্থায় মোটরযান পরিদর্শক স্বাক্ষর করতে না চাইলে দেখে নিবে বলে হুমকি প্রদান করেন এবং কক্ষ ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়েন। ওই মুহুর্তে বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীর ঘটনা জানতে পারলে বিআরটিএ এলাকায় পুলিশ দিয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি করা হয় কিন্তু তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মোটরযান পরিদর্শক মো. মুছা প্রতিবেদককে বলেন, আমরা বিআরটিএ’র ট্রাক ডিপোতে পরীক্ষা নিতে গেলে ওখানেও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সুপারিশ করে পাশ করিয়ে দেয়ার জন্যে। কিন্তু পরীক্ষায় খারাপ করার পর উত্তীর্ণ নাহলে তারা বিভিন্ন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করবে বলে হুমকি দেন। গত কয়েকদিন আগেও সিটিজি ক্রাইমটিভি নামক একটি টিভির কয়েকটি মেয়ে সাংবাদিক এসে বলে পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশ করবে। কিন্তু পরীক্ষার হলে তো পরীক্ষার্থী ব্যতিত কেউ প্রবেশ করতে পারেনা। এটা বলার পর তারা বিভিন্ন কথা বলতে থাকেন এবং আরও দুইজন সাংবাদিককে মোবাইল করে আনেন এবং এডিশনাল আইজি, পুলিশ সুপারকে জানাবেন বলে হুমকি দেন। পরে বলে আমাদের এক আত্মীয় পরীক্ষা দিতে এসেছে তাকে পাশ করাতে হবে। মোট কথা তারা দালালি করতে এসেছে।

বিআরটিএ’র সূত্রে জানা যায়, এসব ব্যক্তিরা কক্ষে প্রবেশ করে কর্মকর্তাদের সাথে লিয়াজোঁ করতে চায় তারপরে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিতে থাকে।

বিআরটিএ’র লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তা মেহেদী ইকবাল সিভয়েসকে বলেন, প্রতিদিন কোননা কোন পত্রিকার সাংবাদিক অফিসে আসবে তাও আবার তদবির করতে। অথচ তাদেরকে জীবনে দেখিওনি এবং ওসব সংবাদপত্রেরও নাম শুনিনি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) উসমান সরোয়ার আলম বলেন, প্রতিনিয়ত সাংবাদিক আসাতে আমরা নিজেরাই বুঝতে পারিনা কোনটা আসল কোনটা নকল। যার কারণে আমাদের নিয়মিত কাজে ব্যাঘাত ঘটে। সারাক্ষণ কক্ষে এসে বসে থেকে বিভিন্ন অবান্তর কথা-বার্তা বলতে থাকে। যেটা মোটেও সমুচিত নয়।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, এসব ব্যক্তির জন্য সাংবাদিক সমাজের মান সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে, এরা সাংবাদিক না। প্রশাসন থেকে যদি সাংবাদিক ইউনিয়ন থেকে সহায়তা চাওয়া হয় তাহলে আমরা সহায়তা করবো।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, সাংবাদিকতা মহান পেশা হিসেবে লালন করে গত ১৫ বছর ধরে করেই যাচ্ছি। এখানে অপসাংবাদিকতা বা অসৎ সাংবাদিকতা সহ্য করার মানসিকতা নিজেদেরও নাই এবং সাংবাদিক ইউনিয়নেরও নেই। আমরা প্রত্যেক মিটিংএ এসবের বিরুদ্ধে বলি।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল সিভয়েসকে বলেন, সিটিজি ক্রাইমটিভিসহ চট্টগ্রামে আরও অনেক অনলাইনের কথা শুনছি এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগও এসেছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অপকর্ম চালানোর কারণে বিব্রত হচ্ছে মূলধারার সাংবাদিকরা। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনকে আমরা বলে আসছি। এসব ভুয়া সাংবাদিকরা প্রকৃত সাংবাদিকদের হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। তবে চট্টগ্রামে আরও অনলাইন আছে, যারা প্রকৃত সংবাদের পেছনে দৌঁড়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবির সিভয়েসকে বলেন, বিআরটিএ অফিস চট্টগ্রাম শহর থেকে দূরে হওয়াতে ভুয়া সাংবাদিকরা ওসব অফিসে আসা যাওয়া করতে পারে। আমি বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছি যে, যদি তারা অফিসে কোন বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বা দালালি করে তাহলে তাদেরকে বেঁধে রেখে খবর দেয়ার জন্য। যদি এমন পাই তাহলে তাদেরকে আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিভয়েস

পাঠকের মতামত: