ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রামের প্যানেল মেয়রের হুমকি : বিএনপির একজনও এলাকায় থাকতে পারবে না

যুগান্তর : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি বলেছেন, ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন এবারও হবে।

এ মাসের ৫ তারিখের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের একজনও এলাকায় থাকতে পারবে না। বিএনপি প্রার্থী জেলে। মহানগর আওয়ামী লীগ চাইলে তিনি বের হতে পারেন। না হলে তাকে ওখান থেকেই নির্বাচন করতে হবে।

শুক্রবার রাতে এক নির্বাচনী উঠোন বৈঠকে হাসনি এমন মন্তব্য করেন। তার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে চলছে তোলপাড়। এ বিষয়টি রিটার্নিং অফিসারের নজরে এনেছেন বিএনপি নেতারা।

চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের পক্ষে নগরীর দেওয়ানবাজারের সাহেবপুকুর লেন এলাকায় উঠোন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ওই বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিকের প্যানেল মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসনি।

বিএনপি নেতাকর্মীদের ইঙ্গিত করে হাসনি বলেন, ‘ওই সব কর্মীর লিস্ট দেবেন। সপ্তম পঞ্চম ভাগ করতে হবে। ওই কর্মীদের লিস্ট যাচাই-বাছাই করতে হবে। আপনারা আওয়ামী লীগ অফিসে পাঠাবেন। আপনারা মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে যাবেন। এটা ওখান থেকে যাচাই-বাছাই করার জন্য আসবে। নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো হবে। আপনারা কর্মীরা আছেন বলেই বললাম। নির্বাচন আল্লাহর রহমতে হান্ড্রেড পারসেন্ট আমাদের পক্ষে হবে।’ এ সময় নেতাকর্মীরা জয়বাংলা স্লোগান ও তালি দেন।

হাসনি আরও বলেন, ‘পার্লামেন্ট ভাঙে নাই, নির্বাচন করছেন এমপিরা। পদত্যাগ করেননি, বুঝতে পারছেন? বোঝার কিছু আছে? পার্লামেন্ট ভাঙে নাই, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আছেন। আওয়াজ আছে?’

তিনি বলেন, ‘আমরা ছক করে নির্বাচন করছি। আমরা নিয়মমাফিক নির্বাচন করছি। বিএনপি নেতাকর্মীদের আরও খুঁজবে। একজনও এলাকায় থাকতে পারবে না। বলে দিলাম। যিনি নির্বাচন করছেন তিনি জেলে। যদি মহানগর আওয়ামী লীগ বলে তাকে বের করার জন্য, তাহলে হবে। আর না হয় হবে না। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বললে ওদের ছাড়বে। না হয় ওদের ছাড়বে না। জেলে থাকবে। ওখান থেকেই নির্বাচন করতে হবে তাদের।

আর যারা বিডির বিডির (চট্টগ্রামের ভাষা) করে পুঁটি মাছের মতো ফালায় তাদের সবাইকে খুঁজবে। আগামী ৫ তারিখের পর একজনও ঘরে থাকার সুযোগ পাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আর কিভাবে নির্বাচন করবেন, বলেন। আর কিভাবে নির্বাচন চান? তারপরও ষড়যন্ত্র কিন্তু হচ্ছে। ড. কামাল হোসেন কিন্তু নির্বাচন করছেন না। উনি নির্বাচন করার জন্য উনাদের নিয়ে আসছে।

উনারা আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটি ছক রেডি করতে চাইতেছে। কোনটা। একসঙ্গে সবাই পদত্যাগ করে উইথড্র করে চলে যেতে চাইতেছে। আমরা তাদের অভয় দিয়ে রাখছি।

পুলিশকে আর্মিকে বিডিআরকে (বিজিবি) বলছি। এখন ধরিস না ভাই। এখন অফ থাক। দেখা যাক ওরা কী করে। আপনাদের যে কথাটা বলছিলাম। আমি এ ওয়ার্ডে বেশি সময় দিতে পারব না। আমাকে ডেপুটেশনে পাঠাইছে বাকলিয়ায়। আমাকে বাকলিয়ায় থাকতে হবে। ওই তিনটি ওয়ার্ডে ৫০ পারসেন্ট ভোট আমরা পাব।’

হাসনির বক্তব্য নিয়ে সাধারণ ভোটার ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা হাসনির এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে সরকার কী ধরনের নির্বাচন করতে চায়।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক ইদ্রিস আলী যুগান্তরকে বলেন, হাসনির বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে আগামী নির্বাচনে কী হবে। কিভাবে এ সরকার নির্বাচন করবে, তার সুস্পষ্ট পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে শনিবার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হাসানুজ্জামানকে পুরো ভিডিও দেখানো হয়েছে। আজ রোববার এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসনি যুগান্তরকে বলেন, ‘এটা আমার বক্তব্য নয়। এটি এডিট করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আজকেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করব।

পাঠকের মতামত: