ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

আত্মহত্যার আগে মিতুর সঙ্গে হাতাহাতি হয় ডা. আকাশের

যুগান্তর : আত্মহত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে স্ত্রীর সঙ্গে হাতাহাতি হয় ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের। তানজিলা হক মিতুকে গ্রেফতারের পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

একাধিক পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীর দিনের পর দিন পরকীয়া কুরে খাচ্ছিল ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশকে। যন্ত্রণা এতটা প্রকট হয়ে উঠেছিল যে, শেষ পর্যন্ত স্ত্রীকে পাপের পথ থেকে ফেরাতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তরুণ সম্ভাবনাময়ী এ চিকিৎসক।

নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকার ২ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাসা থেকে সকালে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ডা. আকাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগে চিকিৎসা কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি চন্দনাইশ উপজেলার বাংলাবাজার বরকল

এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেফতার হন তার স্ত্রী তানজিলা হক মিতু।

মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে ডা. আকাশ নিজের ফেসবুকে স্ত্রীর উদ্দেশে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটিতে স্ত্রীর প্রতি তার অভিমান ও ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।

ডা. আকাশ স্ট্যাটাসে স্ত্রীর উদ্দেশে লেখেন- ‘ভালো থেকো, আমার ভালোবাসা তোমার প্রেমিকাদের (প্রেমিকদের) নিয়ে।’

ডা. আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগরীর নন্দনকানন এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিতুকে গ্রেফতার করা হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার যুগান্তরকে বলেন- প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর সঙ্গে রাতে ঝগড়া করেন আকাশ। ভোর ৪টার দিকে তার স্ত্রী রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এর পর আকাশ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে একপর্যায়ে নিজের শরীরে ইনজেকশন পুশ করে বিষপ্রয়োগ করেন।

আকাশের স্ত্রী মিতুকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান শুক্রবার জানান, আত্মহত্যার ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে ওই দম্পতির মধ্যে হাতাহাতিও হয়েছিল। তি

নি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিতু কিছু কিছু বিষয় পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। আবার কিছু বিষয় এড়িয়ে গেছেন।

আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে তিনি স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক’ ও ‘প্রতারণার’ অভিযোগ করে যান। এর ‘প্রমাণ’ হিসেবে মিতুর সঙ্গে তার ‘বন্ধুদের’ বেশ কিছু ছবিও তিনি ফেসবুকে তুলে দিয়ে যান।

অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বছর তিনেক আগে প্রেম করে বিয়ে করেন আকাশ ও মিতু। বিয়ের পর পরই মিতু যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তখন থেকেই বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ চলছিল।

তিনি জানান, গত ১৩ জানুয়ারি মিতু দেশে আসার পর তা আরও বেড়ে

যায়। বুধবার রাতে এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হাতাহাতিও হয়।

সেদিন রাতেই মিতুর বাবা এসে আকাশদের বাসা থেকে মেয়েকে নিয়ে যান। ভোরের দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন আকাশ।

এ নিয়ে এখনও কোনো মামলা হয়নি জানিয়ে অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান জানান, এ নিয়ে কোনো পরিবারই এখনও থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। আকাশের ফেসবুক পোস্ট আর তার পরিবারের মৌখিক অভিযোগের যাচাই করার জন্য মিতুকে আটক করা হয়েছে।

আকাশ তার পোস্টে মিতুর যেসব ‘বন্ধুর’ নাম বলে গেছেন, তাদের বিষয়েও পুলিশ তদন্ত করবে বলে জানান অতিরিক্ত উপকমিশনার।

প্রসঙ্গত, কয়েক বছরের প্রেমের পরিণতি হিসেবে ২০১৬ সালে তানজিলা হক মিতুকে বিয়ে করেন আকাশ। কিন্তু বিয়ের তিন বছর না যেতেই সেই ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায়।

আকাশের ভাই নেওয়াজ মোরশেদ যুগান্তরকে জানান, আকাশের স্ত্রী মিতুর মা-বাবা আমেরিকায় থাকেন। মিতুও মাঝেমধ্যে মা-বাবার কাছে যান। ১৬ জানুয়ারি তিনি দেশে আসেন। বিয়ের বছর না যেতেই পরকীয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আকাশের সঙ্গে মিতুর দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। পরকীয়া থেকে মিতুকে ফেরাতে না পেরে আমার ভাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, যা মৃত্যুর আগে তার দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকেই স্পষ্ট।

মৃত্যুর আগে ডা. আকাশ নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন- ‘২০১৬-তে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক দিন আগে জানতে পারি- কিছু দিন আগে শোভন নামে চুয়েটের ৮ম ব্যাচের এক ছেলের সাথে ও হোটেলে রাত কাটায়; আর কত কি লজ্জা লাগছে সব লিখতে। ততদিনে সবাইকে বিয়ের দাওয়াত দেয়া শেষ। আমাকে যেহেতু চট্টগ্রামের সবাই চিনে, তাই বিয়ে কেনসেল (বাতিল) করতে পারিনি লজ্জাতে।’

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রের সঙ্গে মিতুর পরকীয়া তুলে ধরে ডা. আকাশ লেখেন- ‘ওর মোবাইলে দেখি, ভাইবারে দেখতে পাই মাহবুব নামে কুমিল্লা মেডিকেলের ব্যাচম্যাটের সাথে হোটেলে …শত শত ছবি। আমি তো বেঁচে থেকেও মৃত হয়ে গেলাম। তার পর ক্ষমা চাইল (স্ত্রী) শবেকদরের রাতে কান্না করে পা ধরে আর কখনো এমন হবে না। আমিও ক্ষমা করে দিয়ে এক বছর ভালোভাবেই সংসার করলাম।’

স্ত্রী সম্পর্কে ডা. আকাশ লেখেন- ‘তারপর ও দেশের বাইরে আমেরিকা গেল, মাঝখানে একবার ঈদ পালন করতে আসল সেপ্টেম্বরে ২০১৮ আবার চলে গেল ইউএসএমএলই এর প্রিপারেশন নিচ্ছিল। সাথে ফেব্রুয়ারিতে ২০১৯ এ আমারও ইউএসএ যাওয়ার কথা।

পাঠকের মতামত: