ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

‘প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় সৈকতে অবৈধ স্থাপনা’

দীপক শর্মা দীপু, কক্সবাজার ::   সম্প্রতি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দখলের ঘটনায় তুলকালাম সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার রেশ ধরে জেলা প্রশাসক পরিদর্শনে গেলে দখলের আরো ঘটনা বেরিয়ে আসে। সৈকত দখলের ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে প্রভাবশালী মহল আর তাদের সহযোগিতা করতে পারে প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্তারাও। এমন শংকায় তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে।
ঈদের আগের রাতে সুগন্ধা পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত দখল করে দোকান নির্মান করা হয়। একটি প্রভাবশালী মহল প্রভাব কাটিয়ে দখল নির্মান করার সময় আর একটি পক্ষ বাঁধা দিলেও কোন কাজ হয়না। অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব দোকান উচ্ছেদ হয়েছে । কিন্তু এসব দোকান উচ্ছেদ করতে সময় নেয়া হয়েছে। এর আগেও অবৈধভাবে অনেক দোকান নির্মান করা হলেও এসব উচ্ছেদ করা হয়নি। এভাবে অবৈধভাবে অসংখ্য দোকান নির্মাণ করা হয়েছে সৈকত দখল করে। যা প্রশাসনের কোন বৈধ অনুমতি নেই। বিশ^স্থ সূত্র জানায়- এসব দখলের নৈপথ্যে রয়েছে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির দু’য়েকজন সদস্য। আর এতে সহযোগিতায় থাকতে পারে প্রশাসনের কোন ছায়া শক্তি। তা না হলে সমুদ্র সৈকতে অবৈধভাবে অসংখ্য দোকান গড়ে উঠেছে কেমন করে? – এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের। এসব বিষয় নিয়ে তদন্ত করার দাবি জানিয়ে সমুদ্র সৈকত থেকে সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে উচ্চ আদালতের নির্দেশ পালন করার জন্য কক্সবাজারের সচেতন মহল জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করবেন আজ ১১ জুন।
জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে অবাক হয়েছেন। সমুদ্র সৈকত জুড়ে কেমন করে , কার অনুমতি নিয়ে, কিসের ভিত্তিতে এত দোকান গড়ে উঠেছে এ নিয়ে জেলা প্রশাসক বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এমন কি জেলা প্রশাসকের মুক্ত মঞ্চে লাগোয়া দুই পাশের বীচ দখল করে দোকান গড়ে উঠেছে। এমন দৃশ্য দেখে জেলা প্রশাসক হতাশ হয়ে যান। জেলা প্রশাসক সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্য রক্ষায় সৈকতের সব দোকান বাতিল হয়ে যাওয়া প্লটে বসানোর কথা বলেছেন। যা অত্যন্ত যুক্তিসংগত মনে করছেন সচেতন মহল।
দখলের ঘটনার প্রেক্ষিতে ১০ জুন জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সমুদ্র সৈকত পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক বলেন, দেশের প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতটি দেশবাসীর জন্য এক অমুল্য সম্পদ। এ সম্পদকে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত রাখতে হবে। কারা এ সম্পদ অবৈধভাবে দখল করতে চেয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছড়া সৈকতে এক দোকান কিভাবে হয়েছে তাও তদন্ত করা হবে। তাদের আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এভাবে অবৈধ দখল করতে না পারে সে লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ নজরদারীর ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহজাহান আলি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (পর্যটন ও প্রটোকল), মো: সাইফুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (পর্যটন ও প্রটোকল) এস,এম,সরওয়ার কামাল, বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, মেয়র মুজিবুর রহমান, বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য নঈমুল হক চৌধুরী, মো. কাশেম আলী, মুক্তিযোদ্ধা মো. শাজাহান, বিটিভি জেলা প্রতিনিধি জাহেদ সরওয়ার সোহেল।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পর্যটন ম্যানেজারকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়। এই কমিটি সমুদ্র সৈকতে অবৈধভাবে কতটি দোকান নির্মান হয়েছে, দোকান নির্মানে যারা জড়িত এবং কারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করবেন।

পাঠকের মতামত: