ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া ভূমি অফিসের চিত্র পাল্টে দিলেন এসিল্যান্ড আরাফাত

এম জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া ::  ভূমি অফিসে ঢোকার পথেই বাগান। নানা জাতের ফুল আর বিভিন্ন গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ বাগান। গাছগুলো হয়ে উঠেছে পাখির অভয়ারণ্য। বিভিন্ন জাতের পাখির কলতানে মুখর থাকে পুরো বাগান। এর ডানপাশেই টিনের ছাউনী দিয়ে তৈরী করা হয়েছে গোলঘর। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘ছায়াবীথি’। একটু পরেই সেমিপাকা, সুন্দর-সুসজ্জিত ৬-রুমের একটি ঘর। ঘরটির বাইরে রাখা হয়েছে পরিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। কোনও পার্ক নয়, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের চিত্র এটি।
ভূমি অফিসের বাইরের দেয়ালে লেখা হয়েছে ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত’সহ বিভিন্ন শ্লোগান। কেবল বাহ্যিক রূপবদলই নয়, এখানে ভূমি সংক্রান্ত প্রাথমিক ধারণা লাভেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে কোনও একজন কর্মকর্তা হাজির হয়ে জমিজমা সংক্রান্ত প্রাথমিক ধারণা দেন সাধারন মানুষদের। নতুন এই সেবার সুবাদে চকরিয়া ভূমি অফিস এখন সেবাগ্রহীতাদের কাছে নির্ভরযোগ্য স্থান।
চকরিয়া ভূমি অফিসের বদলে যাওয়ার অন্যতম কারিগর সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মো.ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত। অথচ বছর দু’য়েক আগেও চকরিয়া ভূমি অফিসের চিত্র ছিল আর দশটা কার্যালয়ের মতোই। আগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শত চেষ্টা করেও পাল্টাতে পারেনি অফিসের চিত্র। অফিসও ছিল ‘অনিয়মে ভরপুর।
খোন্দকার মো.ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই চিত্রটা বদলে দিয়েছেন । তিনি যোগদানের পর থেকে বদলে যেতে থাকে ভূমি ব্যবস্থাপনার দৃশ্যপট। কাজ শুরুর দিনই কর্মস্থলকে ‘দালালমুক্ত অফিস’ হিসেবে ঘোষণা দেন তিনি।
মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য নতুন নিয়ম চালু করেন। আবেদনকারীকে নিজে ভূমি অফিসে এসে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে আবেদন জমা দেয়ার নিয়ম চালু করেন। তারা তখন কমিশনারের কাছেই জানতে পারছেন মামলা সংক্রান্ত বিষয়াদি।
পুরো ভূমি অফিসটি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত। এতে যুক্ত রয়েছে রেকর্ড রুমসহ সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কক্ষও। এর আগে রেকর্ড রুমের নথি খোঁজা নিয়ে ছিল দীর্ঘসূত্রতা। একটি নথি পেতে তিন-চার দিনও লেগে যেত। এখন বছর ও কেস নাম্বার অনুযায়ী সাজানো হয়েছে এসব নথি। তৈরি হয়েছে রেকর্ড রুম ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। তাই এখন মুহূর্তেই পাওয়া যায় যে কোন নথি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ বছরে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক ভূমিহীন পরিবারে কাছে জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। আগামী মাসে আরো অর্ধশতাধিক ভূমিহীন পরিবারের কাছে জমি বন্দোবস্তি দেয়া হবে। এছাড়া আগে ভূমি অফিসের সব কার্যক্রম হাতে-কলমে করা হতো। এখন প্রতিটি কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে করা হয়। নামজারি খতিয়ানের জন্য আবেদনের পরপরই সেবাগ্রহীতাদের মোবাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি মেসেইজ চলে যাচ্ছে। খতিয়ান সৃজনে সরকারি ফি বাবদ ১১৫০ টাকা জমা দিতে হয়। এর বাইরে আর কোন টাকার প্রয়োজন হয়না সেবা গ্রহীতাদের।
এমনিতেই দেশের ভূমি অফিসগুলোতে হয়রানির শিকার হন অনেকে। জমিজমা নিয়ে প্রাথমিক ধারণার অভাবই এর মূল কারণ। ফলে সৃষ্টি হয় নানা জটিলতা। এটাই দেশের বিভিন্ন ভূমি অফিসের চেনা চিত্র। সেই ধারণা নিঃসন্দেহে পাল্টে দিয়েছে চকরিয়ার উপজেলা ভূমি অফিস। এটি এখন হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের জমিজমা সম্পর্কিত ধারণা লাভের জায়গা।
ভূমি অফিসে দেখা হয় ৮০ বছর বয়সি বৃদ্ধা ছালামত উল্লাহর সাথে। তিনি বলেন, আগে আমাদের একটি নামজারী খতিয়ান করতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হতো খতিয়ানের জন্য। এখন সে কষ্ট লাগব হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে সপ্তাহের মধ্য পেয়ে যাচ্ছি খতিয়ান। সরকারী ফি ছাড়া উৎকোচও দিতে হয়না কাউকে।
এই কার্যালয়ের অফিস সহকারী মিলন কান্তি বড়–য়া বলেন, আরাফাত স্যার যোগ দেওয়ার পর সেবা গ্রহীতাদের জন্য একটি গোলঘর, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থাসহ পুরো অফিসকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। আমরাও কাজ করে আনন্দ পাচ্ছি।
এসিল্যান্ডের কাছে অন্যদের অনেক কিছুই শেখার আছে বলে মন্তব্য করে ডুলাহাজারা কলেজের অধ্যাপক সেন্টু কুমার চৌধুরী বলেন, ‘ওনার মতো আমরা যারা সেবাগ্রহীতা রয়েছি তারাও যদি সচেতন হয় ভূমি অফিস না পুরো উপজেলাকে পাল্টে দেয়া সম্ভব। এর ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে হবে। দেশ এগিয়ে নিতে হলে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্টা কারো একার পক্ষে সম্ভব না।
চকরিয়া ভূমি অফিসের এমন বদলে যাওয়ার কারিগর সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মো.ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত বলেন, ‘সত্যি বলতে দুর্নীতিমুক্ত অফিস গড়ার কাজটা মোটেও সহজ নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কর্মচারীদের বোঝানো, দালালমুক্ত করা। খুবই কঠিন একটি কাজ।
তিনি বলেন, ভূমি অফিসে বিভিন্ন সেবা সহজীকরণের জন্য উদ্যোগ গস্খহণ করেছি। শতভাগ নামজারি অনলাইনের মাধ্যমে করা হচ্ছে। এসব খতিয়ান সৃজন খুব আন্তরিকতা ও দ্রæততার সাথে করার জন্য ‘ ভূমি সেবা চকরিয়া’ নামে একটি অ্যাপস চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সাময়িক কষ্ট হলেও অবশ্য এখন জনগণকে উপযুক্ত সেবা দিতে পারছি। স্টাফরাও সহযোগিতা করছে। এর ধারাবাহিকতা রক্ষার দায়িত্ব কিছুটা সেবা গ্রহীতাদেরও। তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

পাঠকের মতামত: