ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘ওয়াইল্ডবিস্ট’ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে সাফারি পার্ক

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কক্সবাজারের চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা বিরল প্রজাতির ‘ওয়াইল্ডবিষ্ট’ দম্পতির ঘরে পর পর জন্ম নেওয়া তিনটি ওয়াইল্ডবিস্টের বাচ্চা এখন অনেক বড় হয়েছে। একেকটি বাচ্চার বয়স এখন যথাক্রমে দুই থেকে চার বছরের মধ্যে হওয়ায় মায়ের সাথে খুনসুটি করে এদিক-ওদিক ঢুঁ মারছে। আর এসব বাচ্চাকে দেখতে উৎসুক দর্শনার্থীর ভিড় পড়ছে পার্কের নির্দিষ্ট বেষ্টনীতে। সর্বশেষ গতবছরের মে মাসে ওয়াইল্ডবিষ্ট দম্পতির ঘরে আসে তৃতীয় বাচ্চাটি। স্ত্রী লিঙ্গের ওয়াইল্ডবিষ্ট।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার কালো প্রজাতির এই ওয়াইল্ডবিষ্ট দম্পতির তিন বাচ্চাসহ পার্কে এখন বিরল এই প্রাণির সংখ্যা পাঁচে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পর পর ওয়াইল্ডবিষ্টের ঘরে তিনটি বাচ্চা প্রসবের ঘটনা রীতিমতো অবাক করার মতোই। এসব বাচ্চা থেকে ভবিষ্যতেও বেশ প্রজননের সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় পার্ক কর্তৃপক্ষ সেদিকেই বেশ নজর দিয়েছে। এসব বাচ্চাকে সার্বক্ষণিক নজরদারি এবং পরিচর্যা করা হচ্ছে।

সাফারি পার্কের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে জানান, ওয়াইল্ডবিষ্ট দম্পতির ঘরে জন্ম নেওয়া পর পর তিনটি বাচ্চা বেশ সুস্থ ও সবল রয়েছে। একেকটি বাচ্চার ওজন এখন বেশ কয়েককেজিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রজাতির ওয়াইল্ডবিষ্টের বিজ্ঞানসম্মত নাম কননোচেটেস গনোও।

মাজহারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেই প্রজনন হলো দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব প্রদেশের একমাত্র কালো প্রজাতির ওয়াইল্ডবিষ্টের। ইতোপূর্বেও কয়েক বছরের ব্যবধানে দুটি বাচ্চা প্রসব করেছিল এই ওয়াইল্ডবিষ্ট দম্পতি। ২০০৬ সালে পার্কে প্রথমবারের মতো দুটি ওয়াইল্ডবিস্টের বাচ্চা আনা হয় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। বর্তমানে তাদের সংসারে সদস্য সংখ্যা পাঁচজনে দাঁড়ালো। তন্মধ্যে দুটি পুরুষ ও তিনটি স্ত্রী লিঙ্গের।

পার্ক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের মাত্র দুটি জায়গায় দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব প্রদেশের কালো প্রজাতির ওয়াইল্ডবিষ্ট রয়েছে। তন্মধ্যে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে এবং গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। যা এই পার্ক তথা দেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা এবং চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক আবু নাছের মো. ইয়াছিন নেওয়াজ দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়াইল্ডবিষ্ট দম্পতি এইদেশেও তাদের আপন নিবাসের মতো আবাসস্থল খুঁজে পেয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা এই পার্কের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। তৃণভোজী এই প্রাণি এখানকার পরিবেশের সঙ্গে সহজে খাপ খেয়ে যায়। আর এতেই প্রজননের ক্ষেত্রে একের পর এক সফলতাও এসেছে।

পার্কের প্রধান কর্মকর্তা আরো জানান, ওয়াইল্ডবিষ্ট দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে। এরা তৃণভোজী প্রাণি। তারা ঘাঁস, সবজি ও লতাপাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। প্রতিবছর মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যেই এই প্রাণির প্রজনন হয়। সর্বোচ্চ ২৮ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে ওয়াইল্ডবিষ্ট।

এই বন্যপ্রাণির গড়ে উচ্চতা হয় ১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার থেকে ১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। জন্ম নেওয়া বাচ্চা ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ খেয়েই বড় হয়। তবে বয়স তিনমাস হলেই একটু একটু করে কঁচি ঘাঁস খাওয়ার অভ্যাস শুরু করে। প্রাপ্তবয়স্ক ওয়াইল্ডবিষ্ট ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌঁড়াতে পারে। বয়স ৭ থেকে ৮ মাস হলেই প্রজনন ক্ষমতা আসে ওয়াইল্ডবিষ্টের।

পাঠকের মতামত: