ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

হাতের কাছেই মিলছে টাটকা খেজুরের রস ও গুড

মাহাবুবুর রহমান. কক্সবাজার ::  শীত এসে গেছে এখন ভাপা পিঠা খাওয়ার একটি প্রচলন বাঙ্গালীর দীর্ঘ দিনের আর গরম গরম ভাপা পিঠার সাথে খেজুরের রস হলে আর কথাই নেই। আবার ভাপা পিঠার ভেতরেও খেজুরের গুড ব্যাবহারে ভাপা পিঠা হয়ে উঠে আরো মজাদার। শত বছর ধরে শীতের আগমনি থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত ভাপা পিঠা খায়নি এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুস্কর। পরিবেশগত কারনে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে খেজুরের গাছ অনেক বেশি তাই এখনো দেশের উত্তরাঞ্চলে খেজুরের রস কিছুটা পাওয়া যায় তবে দেশের দক্ষিনাঞ্চলে বিশেষ করে কক্সবাজার অঞ্চলে এখন খেজুর গাছ নেই বলেলই চলে।

এক সময় কক্সবাজারের বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে খেজুর গাছ দেখা গেলেও এখন সেটা বিলুপ্ত। তাই বিশুদ্ধ খেজুরের রস খাওয়ার আর হয়ে উঠেনা কারো। তবে সেই হতাশা গুছিয়ে কক্সবাজারে বিশেষ করে শহরবাসীদের জন্য দারুন সুখবর শহরের খুব কাছেই মনোরম পরিবেশ একেবারে গাছ থেকেই নিয়ে আসা খেজুরের রস পাওয়া যাচ্ছে সাথে শতভাগ বিশুদ্ধ খেজুরের গুড। শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে খুরুশকুল মনোপাড়া এলাকায় মৎস এবং কৃষিতে জাতীয় পুরুষ্কার প্রাপ্ত ব্যাক্তিত্ব ছালেহ আহামদ ৬০ একর জমির উপর গড়ে তুলেছেন বিশেষ একটি খামার যেখানে সব চেয়ে বিশেষায়িত হচ্ছে খেজুর গাছ। প্রায় ৬০০ খেজুর গাছ থেকে প্রতিদিন সকালেই পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৭০০ কেজি টাটকা খেজুরের রস আর এই রস নেওয়ার জন্য প্রতিদিন সকালের অসংখ্য মানুষের দীর্ঘ লাইন থাকে সেখানে।

এছাড়া সেই বিশুদ্ধ রস থেকে তৈরি করা হয় দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ কেজি গুড়। প্রতিষ্টানের প্রধান উদ্দ্যোক্ত মহেশখালীর সন্তান ছালেহ আহামদ জানান,শখের বসে ২০০০ সালের দিকে বিদেশ থেকে এই খেজুরের চারা এনেছিলাম উদ্দেশ্য ছিল বানিজ্যক ভাবে খেজুর উৎপাদন করা। তবে সেটা পরিবেশ এবং নানান কারনে সেটা সম্ভব হয়নি এখন জেলার মানুষকে টাটকা বিশুদ্ধ খেজুরের রস এবং গুড দিতে পেরে ভাল লাগছে।

টাকা মুখ্য বিষয় না, বাজারে সারা বছর যে গুড পাওয়া যায় তা কোন ভাবেই প্রকৃত গুড নয় কারন প্রকৃত গুডের মান এবং ঘ্রান এক নয় তাই আমরা মানুষকে কোন কিছু মিশ্রন ছাড়া প্রকৃত আসল গুড দিতে চায়। ছালেহ আহামদ এর বড় ছেলে সাইমন ছালেহ জানান, আমাদের গুড ১ বছরের বেশিও যদি ফ্রিজে রাখা হয় কোন গুনগত মান পরিবর্তন হবে না। আর খেজুরের রস আমরা সবার চোখের সামনেই গাছ থেকে নামিয়ে সরবরাহ করছি যদিও একেবারে গাছ থেকে নামিয়ে খাওয়াতে কিছুটা স্বাস্থ্যঝুকি আছে তাই একটু সিদ্ধকরে খাওয়া ভাল।

আমরা সব ধরনের প্রসেসিং করে শহরের থানা রোড়ের নাহিয়ান ফুডস থেকে সরাসরি গ্রাহকদের সরবরাহ করে থাকি। আমাদের রস এবং গুড ইতি মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ঢাকা চট্টগ্রামসহ সব যায়গায় যাচ্ছে। তিনি জানান, ছোট বেলায় অনেকে গাছে উঠে খেজুরের রস খেয়েছে বা খেজুর গাছ দেখেছে এখন নতুন প্রজন্ম খেজুর গাছ কি সেটাও চিনবে না তাই আমরা বানিজ্য নয় পরিবেশ এবং ঐতিহ্যরক্ষা করতেই খেজুরের বাগান করেছি।

এদিকে খুরুশকুল মনোপাড়ার সেই মিডওয়ে সাইন্টেফিক খামারে শুধু খেজুরের গাছ নয় রয়েছে প্রায় ১ হাজার নারিকেল গাছ, ৩০ টি পুকুর, ৫০ টি দুধ দেওয়া গাভী, ১ হাজার হাঁস, মাছের হ্যাচারী এক কথায় একটি পরিপূর্ন আদর্শ খামার সেটাকে বলে তার সব গুন আছে সেখানে।

পাঠকের মতামত: